সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটা যৌক্তিক প্রক্রিয়া । যেক্ষেত্রে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সমস্যা চিহ্নিতকরণ বা করণীয় কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জনের পর সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারাবাহিক কতকগুলো পদক্ষেপ অনুসরণ করেন । এরূপ পদক্ষেপ অনুসরণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কতকগুলি বিষয় তাকে সহায়তা প্রদান করে । নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১. বিচার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা (Judgment power and intuition): বিচার ক্ষমতা হলো কোনো পরিস্থিতি অনুধাবনপূর্বক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞা হলো ভবিষ্যৎকে বুঝতে পারার সামর্থ্য । বিভিন্ন বিকল্প থেকে উত্তম বিকল্প বাছাইয়ে সিদ্ধান্তগ্রহীতার বিচার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করে । সাধারণ বিচারে কোনো বিকল্প লাভজনক মনে হলেও প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় তা লাভজনক নাও হতে পারে । তাই সিদ্ধান্তগ্রহীতা কতটা বিচক্ষণতার সাথে ও দূরদৃষ্টি সহকারে উত্তম বিকল্প বাছাই করতে সক্ষম তা এক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় ।
২. সুসংবদ্ধ চিন্তা (Systematic thought) : সুসংবদ্ধ চিন্তা বলতে একজন সিদ্ধান্তগ্রহীতা কতটা ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ম মেনে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন তার সামর্থ্যকে বুঝায় । অনেকেই থাকেন যারা কোনো বিষয়কে গুছিয়ে চিন্তা করতে পারেন না। অনেকে বিষয় বুঝে উঠার আগেই মতামত দিয়ে ফেলেন । প্রতিষ্ঠানের নিয়ম- কানুনও অনেকে বুঝে উঠতে পারে না । সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না । তাই সুসংবদ্ধ চিন্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিকে সহায়তা করে ।
৩. অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্য (Experience and skill): সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্য একটা বড় সহায়ক উপাদান । অভিজ্ঞতা এমন এক শক্তি যা ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, বিচার ক্ষমতা সবকিছুকেই সংহত ও শক্তিশালী করে। অভিজ্ঞ ব্যক্তি সাহসী হয় এবং পরিস্থিতি ও প্রয়োজন দ্রুত উপলব্ধি করতে পারে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিক নৈপুণ্য, দক্ষতা বা কুশলতা যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত দিতে ও অন্যদের নিকট থেকে নিজ মতামতের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যক্তিকে সহযোগিতা করে ।
৪. তথ্য (Information): বর্তমান যুগ হলো তথ্যের যুগ । যে যত বেশি তথ্য ধারণ করেন তার পক্ষে তত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাল এখন আর নেই । একজন শিল্পমালিক উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা বিবেচনা করেন। প্রতিযোগীরা কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, গ্রাহকদের রুচি-পছন্দ কোন দিকে যাচ্ছে, উৎপাদন বাড়ালে তা বিক্রয়ে বিক্রয় বিভাগ কতটা সমর্থ, মধ্যস্থ ব্যবসায়ীরা কেমন সাড়া দেবে- এ সকল বিষয়ে তথ্য থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে থাকে ।
৫. ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (Power and authority): ক্ষমতা হলো অন্যদের প্রভাবিত করার সামর্থ্য । অন্যদিকে কর্তৃত্ব হলো অন্যদের বাধ্য করার ক্ষমতা । একজন ব্যবস্থাপক যদি অন্যদেরকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য রাখেন তবে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয় । সাংগঠনিক নিয়মে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই অধস্তনদের ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী থাকেন। ফলে তার দেয়া সিদ্ধান্ত মানতে অধস্তনরা বাধ্য থাকে। তদুপরি যদি তিনি অধস্তনদের প্রভাবিত করার সামর্থ্য রাখেন তবে তার এই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখে ।
৬. প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য (Capacity of organization) : অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন সহযোগী উপায়- উপকরণসমূহের কার্যকর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের যে সক্ষমতার সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বলে । যোগ্য জনশক্তি, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা, উত্তম কার্য পরিবেশ, আর্থিক ও কারিগরি সামর্থ্য, বাজার সামর্থ্য, ব্যবস্থাপনা সামর্থ্য, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাম্য মাত্রায় বজায় থাকলে নির্বাহীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন সহজ হয় । অন্যথায় সিদ্ধান্ত দিতে ব্যবস্থাপকদের নানান বিষয় ভাবতে হয় । ফলে সিদ্ধান্তহীনতার প্রতি এক ধরনের ঝোঁকের সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
৭. অংশগ্রহণের সুযোগ (Opportunity of participation): সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধস্তনদের অংশগ্রহণের সুযোগ সিদ্ধান্তের মানকে উন্নত করে । সেই সাথে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেও সহায়তা দেয় । একটা প্রতিষ্ঠানে যদি গণতান্ত্রিক বা অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলা যায় তবে অধস্তনদের মধ্যে উচ্চ মনোবল বিরাজ করে । ফলে তারা পরামর্শ প্রদানে যেমনি স্বতঃস্ফূর্ত থাকে তেমনি গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসে । তাই প্রতিষ্ঠানে অধস্তনদের কার্যকর অংশগ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলা গেলে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহায়তা দেয় ।
Read more